YouVersion Logo
Search Icon

প্রেরিত 27

27
পৌলের রোমযাত্রা
1যখন আমাদের জলপথে ইটালিতে যাওয়া স্থির হল তখন পৌল ও আর কয়েকজন বন্দীকে জুলিয়াসের হাতে অর্পণ করা হল। জুলিয়াস ছিলেন সম্রাট আগষ্টাসের রাজকীয় সেনাবাহিনীর নায়ক।#প্রেরিত 25:12 2আমরা আদ্রামিত্তিয়াম বন্দর থেকে একটি জাহাজে করে রওনা হলাম। এই জাহাজটির এশিয়া প্রদেশের বিভিন্ন বন্দর হয়ে যাবার কথা ছিল। ম্যাসিডনবাসী আরিস্টারকাস থেসালনিকা থেকে আমাদের সঙ্গ নিয়েছিলেন।#প্রেরিত 19:29; 20:4 3পরের দিন আমরা সীদোনে গিয়ে পৌঁছালাম। জুলিয়াস পৌলের প্রতি খুব সদয় ছিলেন। তিনি পৌলকে বন্দুদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন যাতে তাঁদের কাছে গিয়ে একটু সেবাযত্ন পেতে পারেন।#প্রেরিত 24:23; 28:16 4সীদোন ত্যাগের পর বাতাস প্রতিকূল থাকায় আমরা সাইপ্রাস দ্বীপের আড়াল দিয়ে যেতে লাগলাম। 5এইভাবে সিলিসিয়া ও পামফিলিয়ার সমুদ্র পার হয়ে গিয়ে পৌঁছালাম লিসিয়ার মুরা নামে একটি জায়গায়। 6সেখানে সেনাপতি আলেকজান্দ্রিয়ার একটি ইটালিগামী জাহাজ পেয়ে সেই জাহাজে আমাদের নিয়ে গেলেন।
7আমরা বেশ কয়েকদিন ধরে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে লাগলাম এবং অতিকষ্টে নিদাস শহরে পৌঁছালাম। কিন্তু এ পথে বাতাসের গতি বিপরীতমুখী তাকায় আমরা ক্রীট দ্বীপের আড়াল দিয়ে সালমোনী অন্তরীপকে পাশে ফেলে চলতে লাগলাম। 8উপকূলের তীর ঘেঁসে বহুকষ্টে ‘সুন্দর’ পোতাশ্রয়ে গিয়ে পৌঁছালাম। জায়গাটা লাসেয়া শহরের কাছেই।
9এইভাবে অনেকদিন কেটে গেল। ইতিমধ্যে উপবাস পর্বও* শেষ হয়ে গিয়েছিল। এই সময় জলযাত্রাও খুব বিপজ্জনক হয়ে উঠল। পৌল তখন কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দিয়ে#২ করি 11:25-26; লেবীয় 16:29 10বললেন, মহাশয়, আমি দেখতে পাচ্ছি, এই জলযাত্রা খুবই বিপজ্জনক হবে এবং এতে নিদারুণ ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। 11কিন্তু সেনাপতি পৌলের কথায় কান না দিয়ে জাহাজের প্রধান নাবিক জাহাজের মালিকের কথাই শুনলেন। 12বন্দরটি শীতকাল কাটাবার পক্ষে বিশেষ সুবিধাজনক ছিল না। তাই অধিকাংশ যাত্রী সেই বন্দর পরিত্যাগ করার পক্ষপাতী ছিল এবং আশা করেছিল যদি তারা কোন রকমে ফিনিক্সে পৌঁছাতে পারে তাহলে সেখানেই শীতকাল কাটাবে। ফিনিক্স ক্রীটের একটি বন্দর। এর দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিক খোলা।
সমুদ্রে ঝড়
13দক্ষিণ দিক থেকে মৃদুমন্দ বাতাস বইতে শুরু হল, তখন সকলে ভাবল যে তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। তাই তারা নোঙ্গর তুলে নিয়ে ক্রীট দ্বীপের তীর বেয়ে জাহাজ চালাতে লাগল। 14কিন্তু অল্পক্ষণের মধ্যেই ডাঙ্গার দিক থেকে প্রচণ্ড ঈশানী ঝড়ের তাণ্ডব শুরু হয়ে গেল। 15ঝড়ের দাপটে জাহাজ সামলাতে না পেরে আমরা হাল ছেড়ে দিলাম। ঝড়ের টানে জাহাজ চলতে লাগল। 16ছোট্ট দ্বীপ কৌদার* ধার ঘেঁসে চলতে চলতে অতি কষ্টে আমরা জাহাজের ডিঙ্গিখানাকে আয়ত্তে আনলাম। 17জাহাজের পাটাতনের ওপরে ডিঙ্গিখানাকে তুলে নিয়ে মাঝিমাল্লারা সেটা দিয়ে জাহাজের খেআলটা মজবুত করে নিল। তারপর বালির চড়ায় আটকে যাবার ভয়ে তারা জাহাজের পাল নামিয়ে বাতাসের মুখে জাহাজ ছেড়ে দিল। 18তখন আমরা বিক্ষুব্ধ ঝড়ের প্রচণ্ড দোলায় দুলতে লাগলাম। তাই পরের দিন জাহাজ থেকে সমস্ত পণ্যসম্ভার ফেলে দেওয়া আরম্ভ করল। 19তৃতীয় দিনে তারা নিজের হাতে জাহাজের সমস্ত যন্ত্রপাতি ফেলে দিল। 20বহুদিন আমরা সূর্য অথবা তারার মুখ দেখতে পাইনি। প্রচণ্ড ঝড় উন্মত্তের মত বয়ে চলেছিল। শেষ পর্যন্ত আমরা বাঁচার আশা ছেড়ে দিলাম।
21দীর্ঘদিন যাত্রীদের উপবাসে কাটতে লাগল। পৌল তখন তাদের কাছে গিয়ে বললেন, বন্ধুগণ, আপনারা যদি আমার কথা শুনতেন এবং ক্রীট থেকে যাত্রা না করতেন তাহলে এতখানি ক্ষতি আপনাদের হত না। 22এখন আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, সাহস হারাবেন না। শুধু এই জাহাজের ক্ষতি ছাড়া আপনাদের মধ্যে কারো কোন ক্ষতি হবে না। 23আমি যে ঈশ্বরের দাস, যাঁর আরাধনা আমি করি, সেই ঈশ্বরের দূত গত রাত্রে আমার সামনে আবির্ভূত হয়ে বলেছেন, 24‘ভয় পেয়ো না পৌল, সীজারের সামনে তোমাকে উপস্থিত হতে হবে। ঈশ্বর অনুগ্রহ করেছেন তাই তোমার এই সহযাত্রীদের প্রাণরক্ষা হবে।’#প্রেরিত 23:11; 9:15 25তাই বন্ধুগণ, সাহস হারাবেন না। আমি বিশ্বাস করি যে ঈশ্বর আমার কাছে যা ব্যক্ত করেছেন, নিশ্চিতভাবে তা ঘটবেন। 26যদিও এখন এই ঝড় আমাদের কোন এক দ্বীপে নিয়ে গিয়ে ফেলবে।#প্রেরিত 28:1
27চোদ্দ দিনের দিন রাত্রেও আমরা আদ্রিয়া সাগরে হাল ছাড়া হয়ে বিক্ষিপ্তভাবে ভেসে বেড়াচ্ছিলাম। প্রায় মাঝরাত নাগাদ নাবিকদের মনে হল যে তারা ডাঙ্গার কাছাকাছি এসে পড়েছে। 28তারা সেখানকার জল মেপে দেখল, সেখানে বিশ বাঁও জল। আর একটু এগিয়ে আবার মাপল, দেখল পনেরো বাঁও জল। 29তখন ভয় হল তাদের, হয়তো জাহাজ উপকূলের পাহাড়ের গায়এ অছড়ে পড়বে, তাই তারা জাহাজের পিছন দিক থেকে চারটে নোঙ্গর ফেলে দিনের প্রতীক্ষায় প্রার্থনা করতে লাগল। 30ওদিকে নাবিকেরা জাহাজ থেকে পালাবার চেষ্টায় জাহাজের সামনের দিক তেকে নোঙ্গর ফেলবার অছিলায় ডিঙ্গিখানা প্রায় জলে নামিয়েছিল। 31পৌল তখন সেনাপতি ও সৈন্যদের বললেন, এই লোকগুলি জাহাজে না থাকলে আপনারা কিছুতেই রক্ষা পাবেন না। 32তখন সৈন্যরা ডিঙ্গির দড়িটা কেটে দিয়ে সেটাকে ভাসিয়ে দিল।
33ভোরের দিকে পৌল তাদের কিছু খেতে অনুরোধ করলেন। বললেন, আজ চোদ্দ দিন হয়ে গেল, আশঙ্কায় আর উপবাসে আপনারা কাটাচ্ছেন, কিছু খাননি। 34তাই আমার অনুরোধ, এবার কিছু খান। প্রাণ বংআচানোর জন্য আপনাদের কিছু খাওয়া দরকার। মনে রাখবেন, আপনাদের মাথার একটি চুলেরও ক্ষতি হবে না।#১ শমু 14:45; ২ শমু 14:11; মথি 10:30 35একথা বলে পৌল রুটি হাতে নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন এবং সকলকে ভাগ করে দিয়ে নিজেও খেতে আরম্ভ করলেন।#যোহন 6:11; লুক 22:19; ২ তিম 4:4; ২ করি 11:25 36তখন তারা সকলে উৎসাহিত হয়ে খাদ্য গ্রহণ করল। 37জাহাজে আমরা সর্বমোট দুশো ছিয়াত্তর জন ছিলাম। 38পর্যাপ্ত পরিমাণে সকলের খাওয়া হলে গমের বস্তাগুলি সমুদ্রে ফেলে দিয়ে তারা জাহাজের ভার হালকা করল।
39দিনের আলো ফুটলে তারা জায়গাটা চিনতে পারল না, তবে দেখল একটি উপসাগরের বেলাভূমিতে এসে তারা পৌঁছেছে। তখন তারা ঠিক করল যে যদি সম্ভব হয়, এইপ থেই জাহাজটাকে পাড়ে নিয়ে যাবে। 40তাই তারা নোঙ্গরগুলো কেটে সমুদ্রের জলে ফেলে দিল এবং হালের বাঁধন খুলে দিয়ে বাতাসের মুখে জাহাজের সামনের দিকে পাল খাটিয়ে দিল যাতে পালে বাতাস লেগে তীরের দিকে জাহাজ এগোতে পারে। 41কিন্তু উজান স্রোতের মাঝখানে পড়ে জাহাজটা চড়ায় ঠেকে গেল। জাহাজের সামনের দিকটা তরঙ্গের প্রবল ধাক্কায় ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।
42সৈন্যরা ঠিক করল, বন্দীদের মেরে ফেলবে, নইলে বন্দীরা হয়তো সাঁতার কেটে পালাবে। 43কিন্তু সেনানায়ক পৌলকে বাঁচাবার জন্য তাদের এ কাজে বাধা দিলেন। তার পরিবর্তে তিনি সকলকে আদেশ দিলেন, যারা সাঁতার জানে তারা যেন প্রথমেই জাহাজ থেকে জলে ঝাঁপ দিয়ে পাড়ে গিয়ে ওঠে। 44তারপর বাকী সকলে তক্তা বা ভাঙ্গা জাহাজের টুকরো ধরে পাড়ে গিয়ে উঠল।#প্রেরিত 27:22

Highlight

Share

Copy

None

Want to have your highlights saved across all your devices? Sign up or sign in