YouVersion Logo
Search Icon

মথি 13

13
একজন চাষীর গল্প
1সেই দিনই ঈসা ঘর থেকে বের হয়ে সাগরের ধারে গিয়ে বসলেন। 2তাঁর কাছে এত লোক এসে জমায়েত হল যে, তিনি একটা নৌকায় উঠে বসলেন, আর সমস্ত লোক সাগরের ধারে দাঁড়িয়ে রইল। 3তখন তিনি গল্পের মধ্য দিয়ে অনেক বিষয় তাদের শিক্ষা দিতে লাগলেন।
4তিনি বললেন, “একজন চাষী বীজ বুনতে গেল। বুনবার সময় কতগুলো বীজ পথের পাশে পড়ল আর পাখীরা এসে তা খেয়ে ফেলল। 5কতগুলো বীজ পাথুরে জমিতে পড়ল। সেখানে বেশী মাটি ছিল না। মাটি গভীর ছিল না বলে তাড়াতাড়ি চারা গজিয়ে উঠল, 6কিন্তু সূর্য উঠলে পর তা পুড়ে গেল এবং শিকড় ভাল করে বসে নি বলে শুকিয়ে গেল। 7আবার কতগুলো বীজ কাঁটাবনের মধ্যে পড়ল। তাতে কাঁটাগাছ বেড়ে উঠে চারাগুলো চেপে রাখল। 8আর কতগুলো বীজ ভাল জমিতে পড়ে কোনটাতে একশো গুণ, কোনটাতে ষাট গুণ আর কোনটাতে ত্রিশ গুণ ফসল জন্মাল।”
9গল্পের শেষে ঈসা বললেন, “যার শুনবার কান আছে সে শুনুক।”
গল্প বলবার উদ্দেশ্য
10পরে সাহাবীরা ঈসার কাছে এসে তাঁকে বললেন, “আপনি গল্পের মধ্য দিয়ে লোকদের শিক্ষা দিচ্ছেন কেন?”
11জবাবে তিনি সাহাবীদের বললেন, “বেহেশতী রাজ্যের গোপন সত্যগুলো তোমাদের জানতে দেওয়া হয়েছে কিন্তু ওদের জানতে দেওয়া হয় নি, 12কারণ যার আছে তাকে আরও দেওয়া হবে, আর তাতে তার অনেক হবে। কিন্তু যার নেই তার যা আছে তা-ও তার কাছে থেকে নিয়ে নেওয়া হবে। 13সেইজন্য আমি গল্পের মধ্য দিয়ে ওদের শিক্ষা দিই, কারণ ওরা দেখেও দেখে না, শুনেও শোনে না এবং বোঝে না। 14এদের মধ্য দিয়ে ইশাইয়া নবীর এই কথা পূর্ণ হচ্ছে:
তোমরা শুনতে থাকবে কিন্তু কোনমতেই বুঝবে না; দেখতে থাকবে কিন্তু কোনমতেই জানবে না। 15এই সব লোকদের দিল অসাড় এবং কান বন্ধ হয়ে গেছে, আর তারা তাদের চোখও বন্ধ করে রেখেছে, যেন তারা চোখ দিয়ে না দেখে, কান দিয়ে না শোনে এবং দিল নিয়ে না বোঝে, আর ভাল হবার জন্য আমার কাছে ফিরে না আসে।
16“কিন্তু ধন্য তোমরা, কারণ তোমাদের চোখ দেখতে পায় এবং তোমাদের কান শুনতে পায়। 17আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমরা যা যা দেখছ তা অনেক নবী ও আল্লাহ্‌ভক্ত লোকেরা দেখতে চেয়েও দেখতে পান নি, আর তোমরা যা যা শুনছ তা তাঁরা শুনতে চেয়েও শুনতে পান নি।
চাষীর গল্পের অর্থ
18-19“এখন তোমরা চাষীর গল্পের অর্থ শোন। যখন কেউ বেহেশতী রাজ্যের কথা শুনেও বোঝে না তখন শয়তান এসে তার দিলে যে কথা বোনা হয়েছিল তা কেড়ে নেয়। সেই পথের পাশে পড়া বীজের মধ্য দিয়ে এই রকম লোকদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে। 20আর পাথুরে জমিতে বোনা বীজের মধ্য দিয়ে তাদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে যারা বেহেশতী রাজ্যের কথা শুনে তখনই আনন্দের সংগে তা গ্রহণ করে, 21কিন্তু তাদের মধ্যে শিকড় ভাল করে বসে না বলে তারা অল্প সময়ের জন্য স্থির থাকে। যখন সেই কথার জন্য কষ্ট এবং জুলুম আসে তখনই তারা পিছিয়ে যায়। 22কাঁটার মধ্যে বোনা বীজের মধ্য দিয়ে তাদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে যারা সেই কথা শোনে, কিন্তু সংসারের চিন্তা-ভাবনা এবং ধন-সম্পত্তির মায়া সেই কথাকে চেপে রাখে। সেইজন্য তাতে কোন ফল হয় না। 23ভাল জমিতে বোনা বীজের মধ্য দিয়ে তাদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে যারা সেই কথা শুনে বোঝে এবং ফল দেয়। কেউ দেয় একশো গুণ, কেউ দেয় ষাট গুণ আর কেউ দেয় ত্রিশ গুণ।”
গমের মধ্যে শ্যামাঘাস
24পরে ঈসা লোকদের শিক্ষা দেবার জন্য আর একটা গল্প বললেন। গল্পটা এই: “বেহেশতী রাজ্য এমন একজন লোকের মত যিনি নিজের জমিতে ভাল বীজ বুনলেন। 25পরে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ল তখন সেই লোকের শত্রু এসে গমের মধ্যে শ্যামাঘাসের বীজ বুনে চলে গেল। 26শেষে গমের চারা যখন বেড়ে উঠে ফল ধরল তখন তার মধ্যে শ্যামাঘাসও দেখা গেল। 27তা দেখে বাড়ীর গোলামেরা এসে মালিককে বলল, ‘আপনি কি জমিতে ভাল বীজ বোনেন নি? তবে শ্যামাঘাস কোথা থেকে আসল?’
28“তিনি তাদের বললেন, ‘কোন শত্রু এটা করেছে।’
“গোলামেরা তাঁকে বলল, ‘তবে আমরা গিয়ে সেগুলো তুলে ফেলব কি?’
29“তিনি বললেন, ‘না, শ্যামাঘাস তুলতে গিয়ে তোমরা হয়তো ঘাসের সংগে গমও তুলে ফেলবে। 30ফসল কাটবার সময় পর্যন্ত ওগুলো একসংগে বাড়তে দাও। যারা ফসল কাটে, আমি তখন তাদের বলব যেন তারা প্রথমে শ্যামাঘাসগুলো জড়ো করে পোড়াবার জন্য আঁটি আঁটি করে বাঁধে, আর তার পরে গম আমার গোলায় জমা করে।’ ”
সরিষা-দানা ও খামির গল্প
31ঈসা তাদের আর একটা গল্প বললেন। গল্পটা এই: “বেহেশতী রাজ্য এমন একটা সরিষা-দানার মত যা একজন লোক নিয়ে নিজের জমিতে লাগাল। 32সমস্ত বীজের মধ্যে ওটা সত্যিই সবচেয়ে ছোট, কিন্তু গাছ হয়ে বেড়ে উঠলে পর তা সমস্ত শাক-সবজীর মধ্যে সবচেয়ে বড় হয়। ওটা এমন একটা বড় গাছ হয়ে ওঠে যে, পাখীরা এসে তার ডালপালায় বাসা বাঁধে।”
33তিনি তাদের আর একটা গল্প বললেন। গল্পটা এই: “বেহেশতী রাজ্য খামির মত। একজন স্ত্রীলোক তা নিয়ে আঠারো কেজি ময়দার মধ্যে মিশাল। ফলে সমস্ত ময়দাই ফেঁপে উঠল।”
34ঈসা গল্পের মধ্য দিয়ে লোকদের এই সব শিক্ষা দিলেন। তিনি গল্প ছাড়া কোন শিক্ষাই তাদের দিতেন না। 35এটা হল যাতে নবীর মধ্য দিয়ে এই যে কথা বলা হয়েছিল তা পূর্ণ হয়:
শিক্ষা-ভরা উদাহরণের মধ্য দিয়ে আমি মুখ খুলব;
দুনিয়ার শুরু থেকে যা যা লুকানো ছিল, তা বলব।
শ্যামাঘাসের গল্পটার অর্থ
36পরে ঈসা লোকদের ছেড়ে ঘরে ঢুকলেন। তখন তাঁর সাহাবীরা এসে তাঁকে বললেন, “জমির ঐ শ্যামাঘাসের গল্পটা আমাদের বুঝিয়ে দিন।”
37জবাবে ঈসা তাঁদের বললেন, “যিনি ভাল বীজ বোনেন তিনি ইব্‌ন্তেআদম। 38জমি এই দুনিয়া, আর বেহেশতী রাজ্যের লোকেরা ভাল বীজ। শয়তানের লোকেরা হল সেই শ্যামাঘাস। 39যে শত্রু তা বুনেছিল সে হল ইবলিস, আর ফসল কাটবার সময় হল এই যুগের শেষ সময়। যাঁরা শস্য কাটবেন তাঁরা হলেন ফেরেশতা। 40শ্যামাঘাস জড়ো করে যেমন আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়, যুগের শেষের সময়ও ঠিক তেমনি হবে। ইব্‌ন্তেআদম তাঁর ফেরেশতাদের পাঠিয়ে দেবেন। 41যারা অন্যদের গুনাহ্‌ করায় এবং যারা নিজেরা গুনাহ্‌ করে তাদের সবাইকে সেই ফেরেশতারা ইব্‌ন্তেআদমের রাজ্যের মধ্য থেকে একসংগে জমায়েত করবেন ও জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে ফেলে দেবেন। 42সেখানে লোকে কান্নাকাটি করবে ও যন্ত্রণায় দাঁতে দাঁত ঘষতে থাকবে। 43সেই সময়ে আল্লাহ্‌ভক্ত লোকেরা তাদের বেহেশতী পিতার রাজ্যে সূর্যের মত উজ্জ্বল হয়ে দেখা দেবে। যার শুনবার কান আছে সে শুনুক।
আরও তিনটি গল্প
44“বেহেশতী রাজ্য জমির মধ্যে লুকিয়ে রাখা ধনের মত। একজন লোক তা খুঁজে পেয়ে আবার লুকিয়ে রাখল। তারপর সে খুশী মনে চলে গেল এবং তার যা কিছু ছিল সব বিক্রি করে সেই জমিটা কিনল।
45“আবার, বেহেশতী রাজ্য এমন একজন সওদাগরের মত যে ভাল মুক্তা খুঁজছিল। 46একটা দামী মুক্তার খোঁজ পেয়ে সে গিয়ে তার যা কিছু ছিল সব বিক্রি করে সেই মুক্তাটা কিনল।
47“আবার, বেহেশতী রাজ্য এমন একটা বড় জালের মত যা সাগরে ফেলা হল আর তাতে সব রকম মাছ ধরা পড়ল। 48জাল পূর্ণ হলে পর লোকেরা সেটা পারে টেনে তুলল। পরে তারা বসে ভাল মাছগুলো বেছে ঝুড়িতে রাখল এবং খারাপগুলো ফেলে দিল। 49যুগের শেষের সময়ে এই রকমই হবে। ফেরেশতারা এসে আল্লাহ্‌ভক্ত লোকদের মধ্য থেকে দুষ্টদের আলাদা করবেন এবং জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে তাদের ফেলে দেবেন। 50সেখানে লোকে কান্নাকাটি করবে ও যন্ত্রণায় দাঁতে দাঁত ঘষতে থাকবে।”
51এর পর ঈসা তাঁর সাহাবীদের জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কি এই সব বুঝতে পেরেছ?”
তাঁরা তাঁকে বললেন, “জ্বী, পেরেছি।”
52তখন ঈসা তাদের বললেন, “বেহেশতী রাজ্যের বিষয়ে যে সব আলেম শিক্ষা পেয়েছেন তারা সবাই এমন একজন গৃহসে'র মত যিনি তাঁর ভাণ্ডার থেকে নতুন ও পুরানো জিনিস বের করেন।”
নিজের গ্রামে হযরত ঈসা মসীহের অসম্মান
53শিক্ষা দেবার জন্য এই সব গল্প বলা শেষ করে ঈসা সেখান থেকে চলে গেলেন। 54তারপর নিজের গ্রামে গিয়ে তিনি মজলিস-খানায় লোকদের শিক্ষা দিতে লাগলেন। তাঁর কথা শুনে লোকে আশ্চর্য হয়ে বলল, “এই জ্ঞান ও এই সব অলৌকিক চিহ্ন-কাজ করবার ক্ষমতা এ কোথা থেকে পেল? 55এ কি সেই ছুতার মিস্ত্রীর ছেলে নয়? তার মায়ের নাম কি মরিয়ম নয়? আর তার ভাইয়েরা কি ইয়াকুব, ইউসুফ, শিমোন ও এহুদা নয়? 56তার সব বোনেরা কি আমাদের মধ্যে নেই? তাহলে কোথা থেকে সে এই সব পেল?” 57এইভাবে ঈসাকে নিয়ে লোকদের মনে বাধা আসতে লাগল।
তখন ঈসা তাদের বললেন, “নিজের গ্রাম ও নিজের বাড়ী ছাড়া আর সব জায়গাতেই নবীরা সম্মান পান।”
58লোকদের অবিশ্বাসের জন্য তিনি সেখানে বেশী অলৌকিক চিহ্ন-কাজ করলেন না।

Currently Selected:

মথি 13: MBCL

Highlight

Share

Copy

None

Want to have your highlights saved across all your devices? Sign up or sign in

YouVersion uses cookies to personalize your experience. By using our website, you accept our use of cookies as described in our Privacy Policy