YouVersion Logo
Search Icon

লূক ২২

২২
যীশুর শেষ দুঃখভোগ ও মৃত্যু
1 তখন #মথি ২৬; মার্ক ১৪; যোহ ১৮:১-২৭ তাড়ীশুন্য রুটির পর্ব, যাহাকে নিস্তারপর্ব বলে, নিকটবর্তী হইতেছিল; 2 আর প্রধান যাজকগণ ও অধ্যাপকেরা কি প্রকারে তাঁহাকে বধ করিতে পারে, তাহারই চেষ্টা করিতেছিল, কেননা তাহারা লোকদিগকে ভয় করিত।
ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদার বিশ্বাস ঘাতকতা
3 আর শয়তান ঈষ্করিয়োতীয় নামক যিহূদার ভিতরে প্রবেশ করিল, এ সেই বারো জনের একজন। 4 তখন সে গিয়া প্রধান যাজকদের ও সেনাপতিদের সহিত কথোপকথন করিল, কিরূপে তাঁহাকে তাহাদের হস্তে সমর্পণ করিতে পারিবে। 5 তখন তাহারা আনন্দিত হইল, ও তাহাকে টাকা দিতে প্রতিজ্ঞা করিল। 6 তাহাতে সে সম্মত হইল, এবং জনতার অগোচরে তাঁহাকে তাহাদের হস্তে সমর্পণ করিবার সুযোগ অন্বেষণ করিতে লাগিল।
নিস্তারপর্ব পালন ও প্রভুর ভোজ স্থাপন
7 পরে তাড়ীশুন্য রুটির দিন, অর্থাৎ যে দিন নিস্তারপর্বের মেষশাবক বলিদান করিতে হইত, সেই দিন আসিল। 8 তখন তিনি পিতর ও যোহনকে প্রেরণ করিয়া কহিলেন, তোমরা গিয়া আমাদের জন্য নিস্তারপর্বের ভোজ প্রস্তুত কর, 9 আমরা ভোজন করিব। তাঁহারা বলিলেন, কোথায় প্রস্তুত করিব? আপনার ইচ্ছা কি? 10 তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, দেখ, তোমরা নগরে প্রবেশ করিলে এমন এক ব্যক্তি তোমাদের সম্মুখে পড়িবে, যে ব্যক্তি এক কলশী জল লইয়া আসিতেছে; তোমরা তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ, যে বাটীতে সে প্রবেশ করিবে, তথায় যাইবে। 11 আর তোমরা বাটীর কর্তাকে বলিবে, গুরু আপনাকে বলিতেছেন, যেখানে আমি আমার শিষ্যগণের সহিত নিস্তারপর্বের ভোজ ভোজন করিতে পারি, সেই অতিথিশালা কোথায়? 12 তাহাতে সে তোমাদিগকে সাজান একটি উপরের বড় কুঠরি দেখাইয়া দিবে; সেই স্থানে প্রস্তুত করিও। 13 তাঁহারা গিয়া, তিনি যেরূপ বলিয়াছিলেন, সেইরূপ দেখিতে পাইলেন; আর নিস্তারপর্বের ভোজ প্রস্তুত করিলেন।
14 পরে সময় উপস্থিত হইলে তিনি ও তাহার সঙ্গে প্রেরিতগণ ভোজনে বসিলেন। 15 তখন তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, আমার দুঃখভোগের পূর্বে তোমাদের সহিত আমি এই নিস্তারপর্বের ভোজ ভোজন করিতে একান্তই বাঞ্ছা করিয়াছি; 16 কেননা আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে পর্যন্ত ঈশ্বরের রাজ্যে ইহা পূর্ণ না হয়, সেই পর্যন্ত আমি ইহা আর ভোজন করিব না। 17 পরে তিনি পানপাত্র গ্রহণ করিয়া ধন্যবাদপূর্বক কহিলেন, ইহা লও, এবং আপনাদের মধ্যে বিভাগ কর; 18 কেননা আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে পর্যন্ত ঈশ্বরের রাজ্যের আগমন না হয়, এখন অবধি সেই পর্যন্ত আমি দ্রাক্ষাফলের রস আর পান করিব না। 19 পরে তিনি রুটি লইয়া ধন্যবাদপূর্বক ভাঙ্গিলেন, এবং তাঁহাদিগকে দিলেন, বলিলেন, ইহা আমার শরীর, যাহা তোমাদের নিমিত্ত দেওয়া যায় #২২:১৯ (বা) যাইতেছে।, ইহা আমার স্মরণার্থে করিও। 20 আর সেইরূপে তিনি ভোজন শেষ হইলে পানপাত্রটি লইয়া কহিলেন, এই পানপাত্র আমার রক্তে নূতন নিয়ম, যে রক্ত তোমাদের নিমিত্ত পাতিত হয়। #২২:২০ (বা) হইতেছে। 21 কিন্তু দেখ, যে ব্যক্তি আমাকে সমর্পণ করিতেছে, তাহার হস্ত আমার সহিত মেজের উপরে রহিয়াছে। 22 কেননা যেমন নিরূপিত হইয়াছে, তদনুসারে মনুষ্যপুত্র যাইতেছেন, কিন্তু ধিক্‌ সেই ব্যক্তিকে, যাহার দ্বারা তিনি সমর্পিত হন। 23 তখন তাঁহারা পরস্পর জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন, তবে আমাদের মধ্যে এ কাজ কে করিবে?
24 আর তাঁহাদের মধ্যে এই বিবাদও উৎপন্ন হইল যে, তাঁহাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ বলিয়া গণ্য? 25 কিন্তু তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, জাতিগণের রাজারাই তাহাদের উপরে প্রভুত্ব করে, এবং তাহাদের শাসনকর্তারাই ‘হিতকারী’ বলিয়া আখ্যাত হয়। 26 কিন্তু তোমরা সেইরূপ হইও না; বরং তোমাদের মধ্যে যে শ্রেষ্ঠ, সে কনিষ্ঠের ন্যায় হউক; এবং যে প্রধান, সে পরিচারকের ন্যায় হউক। 27 কারণ, কে শ্রেষ্ঠ? যে ভোজনে বসে, না যে পরিচর্যা করে? যে ভোজনে বসে, সেই কি নয়? কিন্তু আমি তোমাদের মধ্যে পরিচারকের ন্যায় রহিয়াছি। 28 তোমরাই আমার সকল পরীক্ষার মধ্যে আমার সঙ্গে সঙ্গে বরাবর রহিয়াছ; 29 আর আমার পিতা যেমন আমার জন্য নিরূপণ করিয়াছেন, আমিও তেমনি তোমাদের জন্য এক রাজ্য নিরূপণ করিতেছি, 30 যেন তোমরা আমার রাজ্যে আমার মেজে ভোজন পান কর; আর তোমরা সিংহাসনে বসিয়া ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশের বিচার করিবে। 31 শিমোন, শিমোন, দেখ, গমের ন্যায় চালিবার জন্য শয়তান তোমাদিগকে আপনার বলিয়া চাহিয়াছে; 32 কিন্তু আমি তোমার নিমিত্ত বিনতি করিয়াছি, যেন তোমার বিশ্বাসের লোপ না হয়; আর তুমিও একবার ফিরিলে পর তোমার ভ্রাতৃগণকে সুস্থির করিও। 33 তিনি তাঁহাকে কহিলেন, প্রভু, আপনার সঙ্গে আমি কারাগারে যাইতে এবং মরিতেও প্রস্তুত আছি। 34 তিনি কহিলেন, পিতর, আমি তোমাকে বলিতেছি, যে পর্যন্ত তুমি আমাকে চিন না বলিয়া তিন বার অস্বীকার না করিবে, সেই পর্যন্ত আজ মোরগ ডাকিবে না।
35 আর তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, আমি যখন থলি, ঝুলি ও জুতা ছাড়া তোমাদিগকে পাঠাইয়াছিলাম, তখন তোমাদের কি কিছুর অভাব হইয়াছিল? তাঁহারা কহিলেন, কিছুরই নয়। 36 তখন তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, কিন্তু এখন যাহার থলি আছে, সে তাহা গ্রহণ করুক, সেইরূপ ঝুলিও গ্রহণ করুক; এবং যাহার নাই, সে আপন চোগা বিক্রয় করিয়া খড়্‌গ ক্রয় করুক। 37 কেননা আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, এই যে বচন লিখিত আছে, “আর তিনি অধর্মীদের সহিত গণিত হইলেন,” #যিশা ৫৩:১২ তাহা আমার মধ্যে পূর্ণ হইতে হইবে; কারণ আমার সম্বন্ধীয় যাহা, তাহা সিদ্ধি পাইতেছে। 38 তখন তাঁহারা কহিলেন, প্রভু, দেখুন, দুইখানি খড়্‌গ আছে। তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, এই যথেষ্ট।
গেৎশিমানী বাগানে যীশুর মর্মভেদী দুঃখ
39 পরে তিনি বাহির হইয়া আপন রীতি অনুসারে জৈতুন পর্বতে গেলেন, এবং শিষ্যগণও তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিলেন। 40 সেই স্থানে উপস্থিত হইলে পর তিনি তাঁহাদিগকে বলিলেন, তোমরা প্রার্থনা কর, যেন পরীক্ষায় না পড়। 41 পরে তিনি তাহাদের হইতে কমবেশ এক ঢেলার পথ অন্তর গেলেন, এবং জানু পাতিয়া প্রার্থনা করিতে লাগিলেন, 42 বলিলেন, পিতঃ, যদি তোমার অভিমত হয়, আমা হইতে এই পানপাত্র দূর কর; তথাপি আমার ইচ্ছা নয়, তোমারই ইচ্ছা সিদ্ধ হউক; 43 তখন স্বর্গ হইতে এক দূত দেখা দিয়া তাঁহাকে সবল করিলেন। 44 পরে তিনি মর্মভেদী দুঃখে মগ্ন হইয়া আরও একাগ্র ভাবে প্রার্থনা করিলেন; আর তাঁহার ঘর্ম যেন রক্তের ঘনীভূত বড় বড় ফোঁটা হইয়া ভূমিতে পড়িতে লাগিল। 45 পরে তিনি প্রার্থনা করিয়া উঠিলে পর শিষ্যদের নিকটে আসিয়া দেখিলেন, তাঁহারা দুঃখ হেতু ঘুমাইয়া পড়িয়াছেন, 46 আর তাঁহাদিগকে বলিলেন, কেন ঘুমাইতেছ? উঠ, প্রার্থনা কর, যেন পরীক্ষায় না পড়।
যীশু শত্রুদের হস্তে সমর্পিত হন
47 তিনি কথা কহিতেছেন, এমন সময়ে দেখ, অনেক লোক, এবং যাহার নাম যিহূদা- সেই বারো জনের মধ্যে একজন- সে তাহাদের আগে আগে আসিতেছে; সে যীশুকে চুম্বন করিবার জন্য তাঁহার নিকটে আসিল। 48 কিন্তু যীশু তাঁহাকে কহিলেন, যিহূদা, চুম্বন দ্বারা কি মনুষ্যপুত্রকে সমর্পণ করিতেছ? 49 তখন কি কি ঘটিবে, তাহা দেখিয়া যাঁহারা তাঁহার নিকটে ছিলেন, তাঁহারা কহিলেন, প্রভু, আমরা কি খড়্‌গ দ্বারা আঘাত করিব? 50 আর তাঁহাদের মধ্যে এক ব্যক্তি মহাযাজকের দাসকে আঘাত করিয়া তাহার দক্ষিণ কর্ণ কাটিয়া ফেলিলেন। 51 কিন্তু যীশু উত্তরে কহিলেন, এই পর্যন্ত ক্ষান্ত হও। পরে তিনি তাহার কর্ণ স্পর্শ করিয়া তাহাকে সুস্থ করিলেন। 52 আর তাঁহার বিরুদ্ধে যে প্রধান যাজকগণ, ধর্মধামের সেনাপতিগণ ও প্রাচীনবর্গ আসিয়াছিল, যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, লোকে যেমন দস্যুর বিরুদ্ধে যায়, তেমনি খড়্‌গ ও লাঠি লইয়া কি তোমরা আসিলে? 53 আমি যখন প্রতিদিন ধর্মধামে তোমাদের সঙ্গে ছিলাম, তখন আমার বিরুদ্ধে হস্ত বিস্তার কর নাই; কিন্তু এই তোমাদের সময় এবং অন্ধকারের অধিকার।
পিতর তিন বার যীশুকে অস্বীকার করেন
54 পরে তাহারা তাঁহাকে ধরিয়া লইয়া গেল, এবং মহাযাজকের বাটীতে আনিল; আর পিতর দূরে থাকিয়া পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিলেন। 55 পরে লোকেরা প্রাঙ্গণের মধ্যে আগুন জ্বালিয়া একত্রে বসিলে পিতর তাহাদের মধ্যে বসিলেন। 56 তিনি সেই আলোর কাছে বসিলে এক দাসী তাঁহাকে দেখিয়া তাঁহার দিকে একদৃষ্টে চাহিয়া বলিল, এই ব্যক্তিও উহার সঙ্গে ছিল। 57 কিন্তু তিনি অস্বীকার করিয়া কহিলেন, না, নারি! আমি তাহাকে চিনি না। 58 একটু পরে আর একজন তাঁহাকে দেখিয়া বলিল, তুমিও তাহাদের একজন। পিতর কহিলেন, ওহে আমি নই। 59 ঘণ্টা খানেক পরে আর একজন দৃঢ়রূপে বলিল, সত্য, এই ব্যক্তিও তাহার সঙ্গে ছিল, কেননা এ গালীলীয় লোক। 60 তখন পিতর কহিলেন, ওহে, তুমি কি বলিতেছ, আমি বুঝিতে পারি না। তিনি কথা বলিতেছিলেন, আর অমনি মোরগ ডাকিয়া উঠিল। 61 আর প্রভু মুখ ফিরাইয়া পিতরের দিকে দৃষ্টিপাত করিলেন; তাহাতে প্রভু এই যে বাক্য বলিয়াছিলেন, ‘অদ্য মোরগ ডাকিবার পূর্বে তুমি তিন বার আমাকে অস্বীকার করিবে,’ তাহা পিতরের মনে পড়িল। 62 আর তিনি বাহিরে গিয়া অত্যন্ত রোদন করিলেন।
যাজকদের ও দেশাধ্যক্ষের সম্মুখে যীশুর বিচার
63 আর যে লোকেরা যীশুকে ধরিয়াছিল, তাহারা তাঁহাকে বিদ্রূপ ও প্রহার করিতে লাগিল। 64 আর তাঁহার চক্ষু ঢাকিয়া জিজ্ঞাসা করিল, ভাববাণী বল্‌ দেখি, কে তোকে মারিল? 65 আর তাহারা নিন্দা করিয়া তাঁহার বিরুদ্ধে আরও অনেক কথা কহিতে লাগিল।
66 যখন দিন হইল, তখন লোকদের প্রাচীনবর্গের সমাজ, প্রধান যাজকেরা ও অধ্যাপকগণ একত্র হইল, এবং আপনাদের সভার মধ্যে তাঁহাকে আনাইল, আর বলিল, তুমি যদি সেই খ্রীষ্ট হও, তবে আমাদিগকে বল। 67 তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, যদি তোমাদিগকে বলি, তোমরা বিশ্বাস করিবে না; 68 আর যদি তোমাদিগকে জিজ্ঞাসা করি, কোন উত্তর দিবে না; 69 কিন্তু এখন অবধি মনুষ্যপুত্র ঈশ্বরের পরাক্রমের দক্ষিণ পার্শ্বে উপবিষ্ট থাকিবেন। 70 তখন সকলে বলিল, তবে তুমি কি ঈশ্বরের পুত্র? তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরাই বলিতেছ যে, আমি সেই। 71 তখন তাহারা বলিল, আর সাক্ষ্যে আমাদের কি প্রয়োজন? আমরা আপনারাই ত ইহার মুখে শুনিলাম।

Highlight

Share

Copy

None

Want to have your highlights saved across all your devices? Sign up or sign in

YouVersion uses cookies to personalize your experience. By using our website, you accept our use of cookies as described in our Privacy Policy